প্রশ্ন ও উত্তর পেজ
01. 'কমলবন' শব্দটির অর্থ কী
উত্তরঃ 'কমলবন' শব্দটির অর্থ পদ্মবন।
02. "এ-রঙের বিপরীতে আছে অন্য রং" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ এ রঙের বিপরীতে আছে অন্য রং" বলতে খুবই পাকিস্তানি শাসকদের বর্বর শাসন নামের শোষণকে বুঝিয়েছেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান দুটি ভূখণ্ড পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ে গঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তান ছিল বর্তমান আমাদের বাংলাদেশ। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা আমাদের নানাভাবে শাসন নামের শোষণ করতে থাকে। তারা আমাদের মাতৃভাষার উপরে আঘাত হানে। স্বাধীনচেতা বাঙালীরা সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। এর জন্য তারা বাঙালীদের ওপর অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছে।
03. 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬' কোন কাব্যগ্রন্থের কবিতা?
উত্তরঃ 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাটি 'নিজ বাসভূমে' কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া।
04. 'সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা'-বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ হানাদার বাহিনীর অশুভ পদচারণে বিপর্যন্ত দেশকে বোঝাতেই কবি সমগ্র দেশকে ঘাতকের অশুভ আস্তানার সঙ্গে তুলনা করেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের ওপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালায়। চারিদিকে তাদের পরিচালিত হত্যা, সন্ত্রাস ও লুঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এ বিষয়টি বোঝাতেই কবি সারা দেশকে ঘাতকের অশুভ আন্তানার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
05. 'ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯' কবিতায় শহরের পথে থরে থরে কী ফুটেছে?
উত্তরঃ 'ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯' কবিতায় শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে।
06. "এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রং" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ "এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রং" বলতে প্রতিবাদ বা গণজাগরণের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অত্যাচার চালায়। তারা সে সময়ের পূর্ববঙ্গের মানুষকে পুতুলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। চারদিকে হত্যা, সন্ত্রাস ও লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এর প্রতিবাদে এদেশের সাধারন মানুষ ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। এ কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
07. "কাপুরুষ, বেইমান। জ্বলন্ত আগুনের মুখে বন্ধুদের ফেলে পালিয়ে যায়।" উক্তিটি কার?
উত্তরঃ "কাপুরুষ, বেইমান। জ্বলন্ত আগুনের মুখে বন্ধুদের ফেলে পালিয়ে যায়।" উক্তিটি ক্যাপ্টেন ক্লেটনের।
০৪. "ব্রিটিশ সিংহ ভয়ে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা।"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নবাব সিরাজউদ্দৌলার আক্রমণের মুখে ইংরেজরা পালিয়ে যাওয়াই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করা হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ ইংরেজরা নবাবের বিনা অনুমতিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই নবাব ওই দুর্গ আক্রমণ করেন। ইংরেজ সৈন্যরা নবাবের সনদের আক্রমণের মুখে দিশেহারা হয়ে পড়লে ক্যাপ্টেন মিনচিন কাউন্সিলর ফকল্যান্ড নৌকা যোগে দুর্গ থেকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। শেষ পর্যায়ে ক্যাপ্টেন ক্লেটন ও গর্ভনর ড্রেক এর সাথে পরামর্শের নাম করে আত্মরক্ষার্থে সব প্রতিজ্ঞা ভুলে দুর্গ থেকে পালিয়ে যান। তাই ব্যাঙ্গার্থে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
09. ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে কে?
উত্তরঃ ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুক পাতে বরকত।
10. "নক্ষেত্রের মতো ঝরে অবিনাশী বর্ণমালা' বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তরঃ 'নক্ষত্রের মতো ঝরে অবিনাশি কর্ণমালা' বলতে আমাদের রাষ্ট্রভাষার স্মারকচিহ্নের অমরত্বকে বোঝানো হয়েছে। বর্ণমালা ভাষার স্মারকচিহ্ন; আর রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও বাংলার বর্ণমালা আমাদের অবিস্মরণীয় এক অর্জন। সে কারণে এই চিহ্ন কোনভাবেই ধূলিত হবে না। যুগ যুগ ধরে আমাদের চেতনার মধ্যে এ চিহ্ন বেঁচে থাকবে। এ কারণে কবি বর্ণমালার ঐ চিহ্নকে অবিনাশী বলে নক্ষত্রের সাথে তুলনা করেছেন।
11. শহরের পথে থরে থরে কী ফুটেছে?
উত্তরঃ শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে।
12. 'সেই ফুল আমাদের প্রাণ' বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ 'সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ' -এখানে 'সেই ফুল' বলতে মুক্তি ও স্বাধিকার চেতনাকে নির্দেশ করা হয়েছে। ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারি কবি দেশে কিছু লোকের অপতৎপরতা লক্ষ করেছেন। চারদিকে সন্ত্রাসের রং ছড়িয়ে পড়তে দেখেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি ভাষা আন্দোলনে আত্মদানকারী বীর শহিদ সালাম ও বরকতকে আবারও রাজপথে নেমে আসতে দেখেন। অর্থাৎ ভাষা-আন্দোলনের অবিনশ্বর সংগ্রামী চেতনায় এখনো মৃত্যু ঘটেনি। ফলে সেই বাস্তবতায়ও মুক্তি ও স্বাধিকার চেতনায় বাঙালি আবার উজ্জীবিত হয়। আর এই চেতনাই বাঙালির প্রাণ।
13. শহরের পথে কী ফুটেছে?
উত্তরঃ শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া ফুটেছে।
14. 'অবিনাশী বর্ণমালা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ 'অবিনাশী বর্ণমালা' বলতে আমাদের রাষ্ট্রভাষার স্মারকচিহ্নের অমরত্বকে বোঝানো হয়েছে। বর্ণমালা ভাষার স্মারকচিহ্ন, আর রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও বাংলার বর্ণমালা আমাদের অবিস্মরণীয় এক অর্জন। সে কারণে এই চিহ্ন কোনভাবেই ধূলিত হবে না। যুগ যুগ ধরে আমাদের চেতনার মধ্যে এ চিহ্ন বেঁচে থাকবে। এ কারণে কবি বর্ণমালার ওই চিহ্নকে অবিনাশী বলেছেন।
15. 'ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯' কবিতায় বরকত কোথায় বুক পাতো
উত্তরঃ ঘাতকের থাবার সম্মুখে।
16. এবংশের কৃষ্ণচূড়া আমাদেরই চেওনার রং' বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তরঃ কবির চেতনায় ভাষা শহীদদের রক্তের বুদবুদ ফুটেছে কালো ফুলে নগরের রাস্তায়। ফুলের লাল রঙ ছড়িয়ে পড়েছে পথের সর্বত্র। ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সংগ্রামের স্মৃতি কবির চেতনা জুড়ে বিরাজমান। তিনি ১৯৬৯-এ এসেও সেই স্মৃতি ভুলতে পারেন না, বরং সেই '৫২-এর চেতনায় দীপ্ত হয়ে সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাই তিনি ভাষাশহিদদের রক্তের চেতনাকে কৃষ্ণচূড়া ফুলের রক্তবর্ণের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
17. থরে থরে কৃষ্ণচূড়া কোথায় ফুটেছে?
উত্তরঃ শহরের পথে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া কোথায় ফুটেছে।
18. 'ফুল নয়, ওরা শহিদের কলকিত রক্তের বুদ্বুদ'-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ ফুল নয় ওরা শহিদের ঝলকিত রক্তের বুদ্বুদ"- লাইনটিতে কবি কৃষ্ণচূড়ার ডালে থরে থরে ফুটে থাকা লাল ফুলকে ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্তের সাথে তুলনা করেছেন। 'ফেব্রুয়ারি-১৯৬৯' কবিতা কবির হৃদয়ে একুশের চেতনার প্রতীক। প্রতি একুশেই কৃষ্ণচূড়ার ডাল রক্তের মতো লাল হয়ে ওঠে ফুলে ফুলে। কবির মনে হয় ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদ যেন কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে ফুটেছে। মূলত কবির স্মৃতিতে হয়ে আছে ভাষাশহিদদের স্মৃতি।
19. 'লালসালু' উপন্যাসে কাকে 'শয়তানের খাম্বা' বলা হয়েছে?।
উত্তরঃ ঢেঙা বুড়ো লোকটা বা তাহেরের বাবা।
20. 'সে-মুখ ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য'- কোন প্রসঙ্গে এবং কেন বলা হয়েছে?
উত্তর। লালসালু' উপন্যাসে এ লাইনটিতে পালকি থেকে মাজারে যাওয়ার পর আমেনা বিবির ভয়ার্ত চেহারার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। বিনা আহারে রোজা রেখে, সারাদিন কুরআন পাঠ করে এবং আদা-নুন দিয়ে ইফতার করা আমেনা বিবির শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে অজানা আশঙ্কা যে, মাজার প্রদক্ষিণের পরও যদি সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়। একদিকে অভুক্ত দুর্বল শরীর আরেক দিকে ভয়-শঙ্কা সব মিলিয়ে আমেনার চেহারা রক্তশূন্য ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে। সে মুখ কোনো জীবন্ত মানুষের নয়, সে মুখে পৃথিবীর কোনো লক্ষণ নেই।
21. আওয়ালপুর ও মহব্বতনগরের মাঝপথে কোন গাছ পড়ে?
উত্তরঃ তেতুল গাছ।
22. 'আসলে সে ঠান্ডা, ভীতু মানুষ' কোন প্রসঙ্গে এবং কেন বলা হয়েছে?
উত্তরঃ আসলে ঠিক সে ঠান্ডা, ভীত মানুষ বলতে রহিমাকে বোঝানো হয়েছে। রহিমা হচ্ছে মসজিদের প্রথম স্ত্রী। শরীরের আকৃতি বড় ধরনের। তিনি মজিদকে মান্য করে, ধর্ম এবং মাজারকে ভয় করে বিশ্বাস করে। মজিদের প্রতিটি কথা না বুঝেই বিশ্বাস করে। এজন্য মজিদের ভাষায় রহিমা একজন ঠান্ডা এবং ভীতু মেয়ে।
23. কে গভর্ণর ড্রেকের ফধ্বংস দেখতে চায়?
উত্তরঃ উমিচাঁদ
24. "দওলত আমার কাছে ভগবানের দাদা মশায়ের চেয়ে বড়' উক্তিটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ সিকান্দার আবু জাফর রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকের উমিচাদ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যঃজন্মগতভাবে লাহোরের অধিবাসী শিখ সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন উমিচাঁদউমিচাঁদ বলেন হলওয়েল হল- গাইস হাসপাতালের হাতুড়ে সার্জন। নিজেকে দওলতের পূজারি বলে পরিচয় দেন-উমিচাঁদ। দওলত আমার কাছে রগবানের দাদা মশায়ের চেয়েও বড়'- উক্তিটি উমিচাদের। "আমি চিরকালই ইংরেজের বন্ধু। মৃত্যু পর্যন্ত এই বন্ধুত্ব আমি বজায় রাখব।'- উক্তিটি উমিচাদের। ব্রিটিশ সিংহ ভরে লেজ গুটিয়ে নিলেন, এ বড় লজ্জার কথা উমিচাদের।
25. কার রক্তে বাস্তবের বিশাল চত্বরে ফুল ফোটে?
উত্তরঃ এখনো বীরের রক্তে বাস্তবের বিশাল চত্বরে ফুল ফোটে।
26. 'সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা।'- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ হানাদার বাহিনীর অশুভ পদচারণে বিপর্যন্ত দেশকে বোঝাতেই কবি সমগ্র দেশকে ঘাতকের অশুভ আস্তানার সঙ্গে তুলনা করেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির উপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। তারা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের উপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালায়। চারদিকে তাদের পরিচালিত হত্যা, সন্ত্রাস ও লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এ বিষয়টি বোঝাতেই কবি সারা দেশকে ঘাতকের অশুভ আস্তানার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
27. ঘাতকের থাবার সম্মুখে কে বুক পেতে দেয়?
উত্তরঃ ঘাতকের থাবার সম্মুখে বুকে পেতে দেয় বরকত।
28. 'এ রক্তের বিপরীতে আছে অন্য রং'- বলতে কী বোঝো?
উত্তরঃ প্রয়োক্ত চরণটির মাধ্যমে কবি বিরুদ্ধ চেতনার আস্ফালনকে বুঝিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই মূলত বাঙালি একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বাঙালির প্রতিষ্ঠালাভের পিছনে ভাষা আন্দোলন এবং ভাষাশহিদদের অবদান তাই অনস্বীকার্য। এ কারণে আলোচ্য কবিতাটিতে শহিদদের আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে কৃষ্ণচূড়া ফুলকে বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার সাথে তুলনা করা হয়েছে। আর এ চেতনার বিরুদ্ধ শক্তিকেই কবি বিপরীত রং হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। প্রশ্নোক্ত পক্তিটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।
29. শামসুর রাহমান কর্মজীবন শুরু করেন কোন পত্রিকার মধ্য দিয়ে?
উত্তরঃ শামসুর রাহমান কর্মজীবন শুরু করেন 'দৈনিক মর্নিং নিউজ' পত্রিকার মধ্য দিয়ে।
30. "এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট- কোন রঙে, কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ এখন সে রঙে ছেয়ে গেছে পথ-ঘাট" এখানে সে রং বলতে কবি আমাদের চেতনার বিপরীত রং অর্থাৎ পাকিস্তানি শাসকদের হীন শাসনকে বুঝিয়েছেন। " 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় কবি কৃষ্ণচূড়ার লাল রংকে আমাদের চেতনার রং হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এ রং বিপরীত রং হিসেবে কবি পাকিস্তানি শাসনকে বুঝিয়েছেন, যারা সারা দেশে অত্যাচার, নির্যাতন চালিয়েছে। কবির মতে, এই রং আলোকে ঢেকে দিয়ে আঁধারের সূচনা করে, মানুষকে অস্থির করে তোলে। মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে মানুষকে নিরাপত্তাহীনতায় নিয়ে যায়। কবি মনে করেন পুরো দেশ যেন এই অশুভ শক্তির আস্তানা হয়ে গেছে। এই বিষয়টিকে বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
31. 'হরিৎ উপত্যকা' অর্থ কী?
উত্তরঃ 'হরিৎ উপত্যকা' অর্থ সবুজ দেশ। হরিৎ উপত্যকা বলতে পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে।
32. 'সারা দেশ ঘাতকের অশুভ আস্তানা' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় 'সারাদেশ যাতকের অশুভ আস্তানা' বলতে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশকে বোঝানো হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশকে নানাভাবে শাসন-শোষণ করেছে। এদেশে বসেই তারা এদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার করেছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যার মাধমে তারা বাঙালির স্বাধীনতার স্পৃহাকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এই কারণে কবি এই দেশকে 'ঘাতকের অশুভ আস্তানা' বলেছেন।
33. কবি কার মুখকে তরুণ-শ্যামল পূর্ব বাংলার সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তরঃ সালাম।
34. 'যে রঙ লাগে না ভালো চোখে, যে রঙ সন্ত্রাস আনে- বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রং, যে-রং লাগে না ভালো চোখে, যে-রং সন্ত্রাসে আনে কারণ অধিকার আদায় সংগ্রামের চেতনার রং প্রেরণার উৎস একুশ, এর বিপরীতেও আছে অন্য এক রং, যা আলোকে ঢেকে নিয়ে আঁধারের সূচনা করে, সত্যকে আড়াল করে মিথ্যা, নীচতা, হীনতা, অন্যায় ছড়ায়। সে-ই রং কবির ভালো লাগে না। কারণ সে রং অস্থির করে তোলে, মানুষের অধিকার ক্ষুণœ করে মানুষকে নিরাপত্তাহীনতায় নিয়ে যায়। কবি সকাল থেকে সন্ধ্যায় সেই রঙের জয়জয়কার লক্ষ্য করেন। কবির প্রিয় দেশ আজ যেন সেই অশুভ ছায়া বিস্তারকারী অশুভ শক্তির বাহক, বিশ্বাস ঘাতকের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। পুরো দেশে যেন তাদের আস্তানা।
35. 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় আমাদের চেতনার রং কী?
উত্তরঃ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ কবিতায় আমাদের চেতনার রং কৃষ্ণচূড়া।
36. "এ-রঙের বিপরীত আছে অন্য রং" বলতে কী বোঝানো হয়েছে।
উত্তরঃ "এ রঙের বিপরীত আছে অন্য রং" বলতে প্রতিবাদ বা গণজাগরণের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন ও অত্যাচার চালিয়েছে। তারা সে সময়ের পূর্ববঙ্গের মানুষকে পুতুলের মতো ব্যবহার করতে থাকে। চারদিকে হত্যা, সন্ত্রাস ও লুণ্ঠন জনজীবনে আতঙ্ক তৈরি করে। এর প্রতিবাদে এদেশের সাধারন মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কৃষ্ণচূড়া আমাদের চেতনার রঙ হলেও এর বিপরীতে লুকিয়ে আছে বেদনার রঙ। এটি মনে ক্ষুব্ধ সৃষ্টি করে। এই রক্তাক্ত রঙটি ছেয়ে গিয়েছিল পথ-ঘাট, সারা দেশে, ঘাতকদের আস্তানা পর্যন্ত। এজন্য এই রঙটি চোখে আসলে ভালো লাগে না। অত্যাচারের এ কথা বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
37. হরিৎ উপত্যকা অর্থ কী?
উত্তরঃ হরিৎ উপত্যকা শব্দের অর্থ- সবুজ প্রান্তর।
38. সালামের মুখে আজ তরুণ শ্যামল পূর্ব বাংলা- ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ কবি ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থানের বিপ্লবী বাংলাকে যেন ভাষা আন্দোলনের শহিদ সালামের বিপ্লবী মুখাবয়বে খুঁজে পেয়েছেন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার উপর পাকিস্তান সরকারের অন্যায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্র-জনতা আশোলন শুরু করে এবং বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করে। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের শোষণ- অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৯৬৯-এর গণ অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ভাষা আশোলনের শহিদ সালাম, বরকতসহ অনেকেই ছিলেন এ আম্পোলনের মূল প্রেরণা। এ বিষয়টি বোঝাতে গিয়েই আলোচ্য চরণটিতে কবি বিপ্লবী ভাষাশহিদ সালামের প্রসঙ্গ টেনেছেন।
39. কার চোখে আলোচিত ঢাকা?
উত্তরঃ সালামের চোখে আলোচিত ঢাকা।
40. "সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ।"- কীভাবে?
উত্তরঃ "সেই ফুল আমাদেরই প্রাণ।" চরণটির মাধ্যমে কবি ভাষা আন্দোলনকারীদের আত্মত্যাগে দুঃখিনী মায়েদের চোখের জলে যে ফুল ফুটেছিল তা বুঝিয়েছেন। 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতায় কবি এদেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনা, গণজাগরণ ও দেশপ্রেম তুলে ধরেছেন। কবির মনে হয়েছে ভাষাশহিদদের রক্তের বুদ্বুদ কৃষ্ণচূড়া ফুল হয়ে শহরের পথে পথে ফুটে আছে। তিনি একুশের কৃষ্ণচূড়াকে বাঙালি জাতির চেতনার রঙের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে চেয়েছেন। ভাষার জন্য যাঁরা রক্ত দিয়েছেন সেই বীরদের রক্তে, সন্তানহারা মায়েদের চোখের জলে যে চেতনাদীপ্ত ফুল ফোটে তা কবির কাছে প্রাণস্বরূপ। সেই চেতনাতেই বাঙালি আজ স্বাধীন জাতি। এই বিষয়টি বোঝাতেই কবি প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
41. 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে?
উত্তরঃ 'ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯' কবিতাটি 'নিজ বাসভূমে' কাব্যগ্রন্থ থেকে চয়ন করা হয়েছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post