প্রশ্ন ও উত্তর পেজ

আমার পথ

01. 'সম্মার্জনা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ সম্মার্জনা' শব্দের অর্থ ঘষে-মেজে পরিষ্কার করা।
02. "যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।' উক্তিটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা লেখক সাম্প্রদায়িকতার প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। লেখক অসাম্প্রদায়িক চেতনার অধিকারী। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় কোথায় তা দেখিয়ে দেওয়া এবং সব জটিলতা দূর করাই তাঁর উদ্দেশ্য। মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, সত্যের মিল থাকে সেখানে কোনো ধর্মের বৈষম্য বা হিংসার ভাব থাকতে পারে না। তাঁর বিশ্বাস, যার নিজের ধর্মের ওপর বিশ্বাস আছে, যে নিজের সত্যকে চিনেছে, সে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।
03. 'আমার পথ' প্রবন্ধে 'সম্মার্জনা' শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে 'সম্মার্জনা' শব্দটি ভণ্ডামি, মেকি ও মিথ্যাকে মেজে-ঘষে পরিষ্কার করা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
04. "আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে"- বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আত্ম তথা নিজের ভেতরের সত্যকে জানতে বলেছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের মতে, নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনিই একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না। অর্থাৎ কেউই তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত করতে পারে না। মানুষের উচিত তার ভেতরের শক্তিকে উপলব্ধি করা এবং আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। তবেই তার নিজের ওপর নিজের বিশ্বাস জন্মাবে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।
05. 'কুর্নিশ' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'কুর্নিশ' শব্দের অর্থ অভিবাদন।
06. "মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।" উক্তিটির তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ভয় করলে মহৎ কাজ সাধন করা যায় না।" গড়ে উঠবে বলে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচানোর জন্য প্রয়োজন মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে। তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে।
07. 'আমার পথ' প্রবন্ধ অনুযায়ী আত্মাকে চিনলেই কী আসে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধ অনুযায়ী আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে
০৮. প্রাবন্ধিক নিজেকে 'অভিশাপ রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তরঃ সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন বলেই কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন। কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান। কিন্তু সমাজের নিয়ম পালটাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। তাই তিনি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন
09. 'আমার পথ' প্রবন্ধে নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শেখাচ্ছিলেন কে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধীজি।
10. লেখক নিজ সত্যকে সালাম জানিয়েছেন কেন?
উত্তরঃ লেখক নিজ সত্যকে সালাম জানিয়েছেন কারণ, সত্যই লেখককে পথ দেখাবে। অন্তরে সত্যকে ধারণ করলে রাজভয়-লোকভয় কোনো ভয়ই বিপথে নিয়ে যেতে পারে না। সত্যকে চিনলে কেউ ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারে না। সত্যই ব্যক্তির পথপ্রদর্শক এবং নিজেকে চেনার সহজ উপায়। তাই লেখক নিজ সত্যকে সালাম জানিয়েছেন।
11. সবচেয়ে বড় ধর্ম কোনটি?
উত্তরঃ সবচেয়ে বড়ো ধর্ম মানুষ ধর্ম।
12. 'অভিশাপ-রথের সারথি' কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ অভিশাপ রথের সারথি' কথাটি দ্বারা সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে লেখকের অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হওয়ার দিকটিকে বোঝানো হয়েছে। কবি পুরাতন-জীর্ণ সমাজকে ঢেলে সাজাতে চান। কিন্তু সমাজের নিয়ম পালটাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। কবি এ সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনি তাদের অন্যায়কে অভিশাপ হয়ে ধ্বংস করতে চান। আর নিজেকে 'অভিশাপ রথের সারথি' বলে লেখক এটিই বোঝাতে চেয়েছেন।
13. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কে মিথ্যাকে ভয় করে?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের মতে যার মনে মিথ্যা সেই মিথ্যাকে ভয় করে।
14. 'মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম' ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি ভয় করলে মহৎ কাজ সাধন করা যায় না।" গড়ে উঠবে বলে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম। মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচানোর জন্য প্রয়োজন মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে। তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড়ো ধর্ম বলা হয়েছে।
15. কর্ণধার' শব্দের অর্থ কী?
'কর্ণধার' শব্দের অর্থ নেতৃত্ব প্রদানে সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
16. যার ভিতরে ভয়, সে বাইরে ভয় পায়।' কেন?
উত্তরঃ যার ভেতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায় কথাটি দিয়ে লেখক বুঝিয়েছেন, যার হৃদয়ে ভয় আছে সে চারদিকে শুধু ভয়ই অনুভব করে। মানবহৃদয়ে সত্য না থাকলে মিথ্যা এসে বাসা বাঁধে। মানুষ যদি মনে সত্যকে ধারণ করতে না পারে তবে মিথ্যা তাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়। মিথ্যা মানুষের জন্য সমস্যা সংকট ও ভয় ডেকে আনে। মানবহৃদয়ে এই দুর্বলতার কারণেই মানুষ বাইরের সবকিছুকে ভয় পায়। উক্ত বাক্য দ্বারা লেখক এটাই বুঝিয়েছেন।
17. কারা বাইরের গোলামি থেকে রক্ষা পায় না?
উত্তরঃ যাদের অন্তরে গোলামির ভাব তারা বাইরের গোলামি থেকে রক্ষা পায় না।
18. 'আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে' লেখক কেন পথে বের হলেন?
উত্তরঃ লেখক সত্যের পথে আগুনে ঝান্ডা দুলিয়ে বের হলেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক নিজেকে সত্যের দিশারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। সত্যই একমাত্র লেখকের পথ, মিথ্যা যত সুন্দরই হোক না কেন তা কখনোই তার কাম্য পথ হতে পারে না। দেশের পক্ষে যা কিছু মঙ্গলজনক, যা কিছু সত্য, সেই সত্যকে পতাকা হিসেবে উড়িয়ে লেখক সত্য পথে বের হলেন।
19. কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম কী?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম জাহেদা খাতুন।
20. ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়।'- ব্যাখ্যা করো।
ভুলের মাধ্যমে মানুষ তার নিজের আত্মাকে জানতে পারে। প্রতিটি মানুষই ভুল করে। তবে লেখকের মতে ভুল করা দোষের কিছু নয়। কেননা, তার মতে, সত্যকে জানতে, নিজের আত্মাকে জানার জন্য ভুল সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ভুলের মাধ্যমেই মানুষ নিজেকে চিনতে পারে এবং নিজেকে সংশোধনও করতে পারে। তাই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
21. নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির ওপর কী আসে?
উত্তরঃ নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির উপর বিশ্বাস আসে।
22. 'একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব।' ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 'একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব।' এর দ্বারা পরনির্ভরশীলতা হওয়াকে বুঝানো হয়েছে। আমরা মানুষ সাধারণত পরনির্ভরশীল হয়ে যাই। পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা আমাদের সাবলম্বী হতে শিখিয়েছেন কিন্তু আমরা পরলম্বনকেই কাজে লাগিয়ে নিজেদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলি।
23. কে বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পায়না?
যার অন্তরে গোলামির ভাব সে বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পায়না।
24. 'আমি সে দাসত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।' ব্যাখ্যা কর।
মিথ্যা বা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় করে, পরাবলম্বনের মতো দাসত্ব থেকে মুক্ত থাকা প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড়ো দাসত্ব বলেছেন। নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই দেশ উদ্ধার হয়ে যাবে না, নিজের বা জাতির মুক্তি আসবে না। লেখকের মতে, যার অন্তরে গোলামির ভাব সে বাইরের গোলামি থেকে মুক্তি পায় না। লেখক ভুল করতে রাজি আছেন, কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন। তিনি বলেছেন, তাঁর এমন কোনো গুরু নেই, যার খাতিরে তিনি কোনো সত্যের আগুন অস্বীকার করে মিথ্যাকে প্রশ্রয় দেবেন। তিনি এ ধরনের দাসত্ব থেকে মুক্ত।
25. 'আমার পথ' প্রবন্ধ অবলম্বনে কোনটি সবচেয়ে বড় দাসত্ব?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধ অবলম্বনে সবচেয়ে বড় দাসত্ব হলো পরাবলম্বন।
26. "যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।"-ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ যে নিজের সত্যকে চিনতে পারে না তার ভেতরে ভয় কাজ করে বলে সে বাইরেও ভয় পায়। বাস্তব জীবনে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানারকম সত্য মিথ্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু খুব অল্প মানুষই সত্য-মিথ্যার প্রকৃত রূপ চিনতে পারে। যে সত্যকে সঠিকভাবে চিনতে পারে তার অন্তরে মিথ্যার অমূলক ভয় থাকে না। আর যে ব্যক্তি সত্যের আসল রূপটি চিনতে ব্যর্থ হয় তার অন্তরেই মিথ্যার ভয় থাকে। যার মনে মিথ্যা সেই মিথ্যার ভয় করে, আর অন্তরে ভয় থাকলে সে ভয় বাইরেও প্রকাশ পায়। এজন্য প্রাবন্ধিক বলেছেন, যার ভেতরে ভয় সেই বাইরে ভয় পায়।
27. 'মেকি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'মেকি' শব্দের অর্থ মিথ্যা।
28. কবি নিজেকে অভিশাপ রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক নিজেকে অভিশাপ রথের সারথি বলেছেন কারণ সমাজ পরিবর্তন করতে তিনি নিজেই রথচালক তথা সারথির আসনে বসেছেন। সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেল বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজ রক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়। এ কথা জেনেও আর এই নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন।
29. 'কর্ণধার' শব্দটির অর্থ কী?
উত্তরঃ 'কর্ণধার' শব্দটির অর্থ মাঝি বা কান্ডারী।
30. প্রবন্ধকার পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড় দাসত্ব বলেছেন কেন?
উত্তরঃ আমার পথ' প্রবন্ধে সবচেয়ে বড় দাসত্ব বলতে পরাবলম্বনকে বোঝানো হয়েছে। আত্মনির্ভরতা থেকেই স্বাধীনতা আসে। লেখকের বিশ্বাস, নিজের সত্যকে নিজের কর্ণধার মনে করলে আপন শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। এমন স্বাবলম্বনের কথা শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু জনগণ মহাত্মা গান্ধীর সেই স্বাবলম্বনের কথা না বুঝে তাঁর ওপর নির্ভর করতে শুরু করে। এটিই হলো পরাবলম্বন। পরাবলম্বন আত্মশক্তিকে নষ্ট করে দেয় বলে তৈরি হয়। মানসিক দাসত্ব। তাই 'আমার পথ' প্রবন্ধে পরাবলম্বনকে সবচেয়ে বড় দাসত্ব বলা হয়েছে।
31. "আমার পথ" প্রবন্ধটি কোন গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?
উত্তরঃ 'রুদ্রমঙ্গল' (১৯২৩) প্রবন্ধগ্রন্থ হতে সংকলিত।
32. 'মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম" বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' নামক প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম সত্য বিশ্বাসে বিকশিত প্রাণ প্রাচুর্যে পূর্ণ এক আমি সত্তাকে প্রকাশ করেছেন। যার মূলে আছে মানুষের মুক্তি তথা সব মানুষের কল্যাণ আর শুভ পরিণাম। পৃথিবীতে নানা মত আর পথ আছে, আছে নানা বিশ্বাস আর ধর্মবোধ। তবে এগুলোর মধ্যে মানব ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। মানুষ যখন এই মানব ধর্মকে সবার ওপরে স্থান দেবে, সব ভুল থেকে বেরিয়ে আসবে, চিন্তা হবে কল্যাণকামী আর মানবপ্রেমী তবেই মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটানো সম্ভব হবে। মানুষ্যত্ববোধ জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে, এক ধর্মের সঙ্গে অপর ধর্মের বিরোধ মিটে যাবে। গোটা মানুষ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা তখনই সম্ভব হবে যখন ঐক্যের মূল হবে এ মানুষ ধর্ম। কাজী নজরুল ইসলাম এই দিকটিই আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।
33. কাজী নজরুল ইসলাম কোন সালে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন?
উত্তরঃ ১৯১৭ সালে।
34. আত্মাকে চিনলে কীভাবে আত্মনির্ভরতা আসে?
উত্তরঃ আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে কারণ নিজেকে সেনা আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক কান্ডারী বলে জানা-এটা দম্ভ নয় অহংকার নয় এটাকে আত্মাকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি বলা হয়। যদি আত্মাকে চেনা যায় তাহলে এটা মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো। যার ভিতরে ভয় আছে সেই বাইরে ভয় পায়। যে মিথ্যাকে চেনে, সে মিথ্যাকে ভয় করেনা। এজন্য আত্মাকে চিনতে পারলে সত্যকে বড় মনে হয় নিজের উপর আত্মনির্ভরতা আসে।
35. কাজী নজরুল ইসলাম কত খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগদান করেন?
উত্তরঃ ১৯১৭
36. 'আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে'- বুঝিয়ে লেখ।
উত্তরঃ সত্য জানা ও আত্মাশক্তির বিকাশের মাধ্যমে আত্মনির্ভরতা আসে। অন্যের ওপর নির্ভর বেঁচে থাকাকে বলা হয় পরনির্ভরতা। যার নিচের শক্তির ওপর বিশ্বাস নেই, যে আত্মশক্তি ও সত্যকে জানে না সে-ই পরনির্ভর। "আমার পথ" প্রবন্ধের লেখকের মতে, পরনির্ভরশীলতাকে বর্জন করতে হলে নিজের সত্যকে জানতে হবে, নিজের শক্তির ওপর আত্মা স্থাপন করতে হবে।
37. 'সম্মার্জনা' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ মেজে ঘসে পরিষ্কার করা
38. 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ সমাজের অনিয়ম ভেঙে ফেলতে প্রাবন্ধিকের যে অবস্থান তার প্রেক্ষিতে কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন। সমাজের প্রচলিত, পুরনো নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা সহজ কাজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের অত্যাচার- নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, অভিশাপ পেতে হয়। এসব জেনেও নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সব অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এবং নিজেই রথচালকের আসনে বসে "অভিশাপ-রথের সারথি" হয়েছেন।
39. 'আমার পথ' প্রবন্ধে 'আমার পথ আমাকে কী দেখাবে?
উত্তরঃ আমার সত্য
40. 'আগুনের সম্মাজ্জর্না' বলতে 'আমার পথ' প্রবন্ধে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ আগুনের সম্ম্মার্জনা বলতে ঘসে মেজে পরিষ্কার করা অরথে বোঝানো হয়েছে। যাদের ভিত্তি পড়ে গেছে তাকে একমাত্র উপরে ফেলে নতুন করে ডিস্তি না কাঁদলে তার ওপর এমারত যতবার গড়া হবে ততবারই তা পড়ে যাবে। দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, প্রয়োজন হবে আগুনের সম্ম্মারূজনা।
41. 'কুহেলিকা' কাজী নজরুল ইসলামের কোন ধরনের রচনা?
উত্তরঃ 'কুহেলিকা' কাজী নজরুল ইসলামের একটি উপন্যাস।
42. 'ও রকম' বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো। প্রাবন্ধিকের এ উক্তির কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে লেখক মিথ্যা বিনয়ের নিরর্থকতা তুলে ধরেছেন। মানুষ কখনো কখনো বিনয় প্রকাশ করতে গিয়ে মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে। লেখক দেখিয়েছেন, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না পারলে পরনির্ভরতা তৈরি হয়। আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব। নজরুলের কাছে এই ভগ্ন আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয়। এর পরিবর্তে তিনি দাম্ভিক হতে রাজি আছেন। কেননা, তার বিশ্বাস সত্যের দাম্ভিকতা মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক ভালো।
43. 'মেকি' শব্দের অর্থ কী?
উত্তরঃ 'মেকি' শব্দের অর্থ মিথ্যা বা কপট।
44. 'ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়। কীভাবে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ ভুলের মাধ্যমে মানুষের আত্মশুদ্ধি ঘটে বলে এর মধ্য দিয়ে গিয়ে সত্যকে পাওয়া যায়। প্রাবন্ধিক মনে করেন ভুল থেকেই মানুষের পক্ষে প্রকৃত শিক্ষা লাভ সম্ভব। কারণ, ভুল না করলে সঠিক ও সত্যপথের সন্ধান লাভ করা যায় না'। ভুল করা এবং তা থেকে শিক্ষা লাভ করার মাধ্যমেই মানুষ প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারে। এর দ্বারা নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। আর এভাবেই সে সত্যপথের সন্ধান লাভ করে। তাই বলা যায়, ভুলের মাধ্যমে নিজের আত্মশুদ্ধি ঘটায় এবং এর মধ্য দিয়ে গিয়ে সত্যকে পাওয়া যায়।
45. কে অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না?
উত্তরঃ যে নিজ ধর্মের সত্যকে চিনেছে সে অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।
46. দীর্ঘদিন ভারতের পরাধীনতার কারণ ব্যাখ্যায় নজরুলের মতামত লেখো।
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের মতে, আত্মনির্ভরতার অভাবই দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ। কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যিসত্যিই আমাদের আসবে, সেদিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা সেদিন নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের উপর নির্ভর করেছিলাম। ফলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টত বোঝা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরতার অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।
47. কাজী নজরুল ইসলামের উপাধি কী?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের উপাধি 'বিদ্রোহী কবি'।
48. ভুলের মধ্য দিয়ে কীভাবে সত্যকে পাওয়া যায়?
উত্তরঃ প্রুফ রিড
49. সমাজের ক্ষুদ্রতম অঙ্গ কোনটি?
উত্তরঃ সমাজের ক্ষুদ্রতম অঙ্গ হলো পরিবার।
50. "সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনারই ফসল।"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ 'মানব কল্যাণ' প্রবন্ধে লেখক মানব কল্যাণ অর্থে আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহারিক জীবনের কল্যাণকে বুঝিয়েছেন। উদ্দীপকের কবিতাংশে কবির ঘর যে ভাঙে তিনি তার ঘর বেঁধে দেন। এই ঘর বেঁধে দেওয়ার মধ্যে ঐ কবির পরোকারী মনোভাবের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মানব-কল্যাণ প্রবন্ধ এবং উদ্দীপক উভয় ক্ষেত্রেই মানব- কল্যাণের বিষয়টি এক ও অভিন্ন হয়ে ধরা পড়েছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা হয়েছে যে, উদ্দীপকের মূলভাব 'মানব-কল্যাণ' প্রবন্ধে আলোচিত প্রকৃত মানব-কল্যাণকেই নির্দেশ করে।
51. কত সালে কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি পল্টনে যোগ দেন?
উত্তরঃ ১৯১৭ সালে।
52. "মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম" বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ মানুষ হিসেবে আমরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এজন্য প্রাবন্ধিকের কাছে 'মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম' বিদ্রোহী ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'আমার পথ' প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সবাই মিলে একই আকাশের তলে বসবাস করি, সবার রক্তই লাল, সৃষ্টিকর্তার আলো, বাতাস, খাদ্য উপভোগ করি। আবার আমরা সবাই একই সত্তার গুণগান করি। তাই ধর্মের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই।
53. 'আমার পথ' প্রবন্ধে সবচেয়ে বড়ো ধর্ম কী?
উত্তরঃ আমার পথ প্রবন্ধে মানুষ ধর্মই বড় ধর্ম।
54. "যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারেনা।" -ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ যে নিজের ধর্মকে চিনেছে, সে অন্য ধর্মকে ঘূর্ণা করতে পারে না- উক্তিটিতে সত্যকে বড় করে দেখানো হয়েছে। সত্যের পূজারী কাজী নজরুল ইসলামের আমার পথ প্রবন্ধে মানব ধর্মকে বড় ধর্ম বলেছেন। সত্যকে চিনলে আত্মনির্ভরশীলতা আসে। নিজের ভিতর ভালোলাগা কাজ করে। যার মনে মিথ্যা তার মনে ভয় থাকে। সত্যের বিপরীত পথ হচ্ছে বিপথ। সত্যকে চিনতে পারলে অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকে না। ফলে রাজ ভয়, লোকভয় কোনো ভয়ই নিজেকে বিপথগামী করতে পারবে না। এজন্য সবার আগে নিজের ধর্মে সত্যকে চিনতে হবে।
55. 'আমার পথ' প্রবন্ধে 'আমার পথ' আমাকে কী দেখাবে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে 'আমার পথ' আমাকে আমার সত্য দেখাবে।
56. 'আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে।' ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে আত্ম তথা নিজের ভিতরের সত্যকে জানতে বলেছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধের লেখকের মতে, নিজেকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনিই একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নত করে না। অর্থাৎ কেউই তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত করতে পারে না। মানুষের উচিত তার ভিতরের শক্তিকে উপলব্ধি করা এবং আত্মপ্রত্যয়ী হওয়া। তবেই তার নিজের উপর নিজের বিশ্বাস জন্মাবে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।
57. 'আমার পথ' প্রবন্ধটি কোন প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধটি 'রুদ্র-মঙ্গল' প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
58. কাজী নজরুল ইসলাম 'আমার সত্য' বলতে কী বুঝিয়েছেন
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম 'আমার সত্য' বলতে পরাধীনতা ও দাসত্ববৃত্তি পরিহার করে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। এ দেশ একদিন ছিল শৌর্য-বীর্যের ও ঐশ্বর্যের লীলাভূমি, কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের আলস্য, কর্মবিমুখতা ও পৌরুষের অভাবে হয়ে পড়েছে পৃথিবীর অন্য সব দেশের চেয়ে হীন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ যদি আপন সত্যকে জানে তাহলে এখনো তাদের হারানো গৌরব ফিরে পাবে। তাই নিজ সত্তাকে জাগিয়ে তুলতেই নিজের শক্তি ও নিজের সত্যব ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে। আর পরাধীনতা ও দাসবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার উপায় হচ্ছে অন্তর্নিহিত সত্য।
59. 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক কাকে সালাম জানিয়েছেন?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আপন সত্যকে সালাম জানিয়েছেন।
60. 'যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়।' ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ যে নিজের সত্যকে চিনতে পারে না, তার ভিতরে ভয় কাজ করে বলে সে বাইরেও ভয় পায়। বাস্তবজীবনে মানুষকে প্রতিনিয়ত নানা রকম সত্য-মিথ্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু খুব অল্প মানুষই সত্য-মিথ্যার প্রকৃত রূপ চিনতে পারে। যে সত্যকে সঠিকভাবে চিনতে পারে, তার অন্তরে মিথ্যার অমূলক ভয় থাকে না। আর যে ব্যক্তি সত্যের আসল রূপটি চিনতে ব্যর্থ হয়, তার অন্তরেই মিথ্যার ভয় থাকে। যার মনে মিথ্যা সেই মিথ্যার ভয় করে, আর অন্তরে ভয় থাকলে সে ভয় বাইরেও প্রকাশ পায়। এজন্য প্রাবন্ধিক বলেছেন, যার ভিতরে ভয় সেই বাইরে ভয় পায়
61. কত সালে কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি পল্টনে যোগ দেন?
উত্তরঃ ১৯১৭ সালে কাজী নজরুল ইসলাম বাঙালি পল্টনে যোগ দেন।
62. 'মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম'- বুঝিয়ে লেখো।
উত্তরঃ মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড় ধর্ম, কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে। মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাকে এক ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে। তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয়েছে।
63. কাজী নজরুল ইসলাম কত বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন।
64. মানুষ-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয় কেন?
উত্তরঃ মানুষ-ধর্ম তথা মনুষ্যত্ববোধই সবচেয়ে বড় ধর্ম, কেননা এটি জাগ্রত হলেই মানুষে মানুষে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে। মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটাতে হলে তাদের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ ব্যবধান ঘোচাতে হলে মানুষের 'মানুষ' পরিচয়টিকে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। এর মাধ্যমে মিটে যাবে এক ধর্মের সজো অন্য ধর্মের বিরোধও। মনুষ্যত্ববোধের জাগরণই ধর্মের প্রকৃত সত্য উন্মোচন করতে পারে। তাই মানুষ-ধর্মকেই সবচেয়ে বড় ধর্ম বলা হয়েছে।
65. "আমি আছি"- এটি কার কথা?
উত্তরঃ "আমি আছি"- এটি মহাত্মা গান্ধিজির কথা।
66. "আমার কর্ণধার আমি"- ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ "আমার কর্ণধার আমি"- এই কথা দ্বারা লেখক নিজেকেই নিজের গুরু মানতে চেয়েছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আপন সত্যের আলোয় মানুষকে পথ চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে নিজের শক্তিতে যার বিশ্বাস নেই, আস্থা নেই, সেই অন্যের কাছে মাথা নত করে। এই ক্ষেত্রে লেখক নিজের শক্তির ওপর প্রচণ্ড বিশ্বাসী তিনি নিজের সত্যকেই কুর্নিশ করেন। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই এক-একটা সত্যের সত্তা থাকে। ব্যক্তি যখন তার সেই সত্যকে আবিষ্কার করতে পারে তখন সে নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে গুরু বা কর্ণধার বলে মানতে চায় না। লেখক চান সবার মধ্যে সেই সত্য আবিষ্কৃত হোক এবং সেই সত্যকে নিজের পথপ্রদর্শক হিসেবে গ্রহণ করুক।
67. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়?
উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলামের মতে পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়।
68. কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তরঃ সমাজের অনিয়ম ভেঙে ফেলতে লেখকের যে অবস্থান তা বোঝাতে কবি নিজেকে 'অভিশাপ-রথের সারথি' বলে অভিহিত করেছেন। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক বলেছেন যে সমাজের প্রচলিত, পুরানো নিয়ম-কানুন ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা অতটা সহজ কাজ নয়। এক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের অত্যাচার- নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়, প্রচলিত নিয়মভঙ্গের অভিশাপ পেতে হয়। এসব জেনেও লেখক নিজের বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সব অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন এবং নিজেই রথচালকের আসনে বসে 'অভিশাপ-রথের সারথি' হয়েছেন।
69. সবচেয়ে বড় ধর্ম কী?
উত্তরঃ সবচেয়ে বড়ো ধর্ম হলো মনুষ্য ধর্ম।
70. "আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে" কথাটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ "আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে" কথাটির মাধ্যমে নিজেকে যথাযথভাবে চিনে নিজের ওপর আত্মনির্ভরতা অর্জনকে বোঝানো হয়েছে। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক আপন সত্যের আলোয় মানুষকে পথ চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নিজের আমিত্বের স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। তিনি আত্মনির্ভরশীলতার দিকটিতেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁর মতে, নিজের ওপর বিশ্বাস ও আত্মনির্ভরতাই মুক্তির মূলমন্ত্র। তাই জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে সফলতা লাভের জন্য সর্বাগ্রে নিজেকে জানতে হবে, নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস রাখতে হবে। আর তা করতে পারলে তৈরি হবে আত্মনির্ভরতা। এর ফলে যেকোনো কাজেই সফল হওয়া সম্ভব হবে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এই বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে।
71. দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে কীসের প্রয়োজন হবে?
উত্তরঃ দেশের যারা শত্রু, দেশের যা কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে আগুনের সম্মার্জনার প্রয়োজন হবে।
72. পরাবলম্বনই আমাদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে- কীভাবে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তরঃ পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে যেভাবে তা হলো আমরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা না করে আমাদের অন্যের দাসত্ব স্বীকার করে নেওয়ার মানসিকতার কারণে। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক নিজেকে চেনা, সত্যের পথে অগ্রসর হওয়া ও আত্মনির্ভরতা অর্জনের কথা বলেছেন। প্রত্যেকের স্বাধীন সত্তা রয়েছে। যারা নিজের সত্তাকে সম্মান করতে জানে না তারা চিরকালই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে। তাদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সব চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা লোপ পেয়ে যায়। এ কারণে লেখক সবাইকে স্বাবলম্বী হতে বলেছেন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে স্বাধীনভাবে বাঁচার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। আমরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা না করে অন্যের দাসত্ব স্বীকার করেছি বলে সেই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে।
73. 'আমার পথ' প্রবন্ধটি কোন প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
উত্তরঃ 'আমার পথ' প্রবন্ধটি 'রুদ্র-মঙ্গল' প্রবন্ধগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
74. 'আমার পথ' প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন কেন? বুঝিয়ে দাও।
উত্তরঃ প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন, কারণ ভুলের মধ্য দিয়ে সঠিক বিষয়টি জানা যায় এবং অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়। ভুল স্বীকার করার মধ্য দিয়ে মানুষ শিখতে পারে। এই শেখার মাধ্যমে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ হয়। ভুল না করলে মানুষ কখনই সঠিক বিষয়টি শিখতে পারবে না। তবে ভুল করে যদি কেউ ভুলকেই সত্য বলে আঁকড়ে ধরে থাকে তবে তার দ্বারা সঠিক জ্ঞান অর্জন কখনই সম্ভব নয়। তাই প্রাবন্ধিক ভুল করতে রাজি আছেন, কিন্তু ভণ্ডামি করতে রাজি নন।
75. আত্মাকে চিনলে কী আসে?
উত্তরঃ আত্মাকে চিনলে আত্মনির্ভরতা আসে।
76. "এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেললে"- লেখক কেন একথা বলেছেন?
উত্তরঃ পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে যেভাবে তা হলো- আমরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা না করে আমাদের অন্যের দাসত্ব স্বীকার করে নেওয়ার মানসিকতার কারণে। 'আমার পথ' প্রবন্ধে লেখক নিজেকে চেনা, সত্যের পথে অগ্রসর হওয়া ও আত্মনির্ভরতা অর্জনের কথা বলেছেন। প্রত্যেকের স্বাধীন সত্তা রয়েছে। যারা নিজের সত্তাকে সম্মান করতে জানে না তারা চিরকালই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে। তাদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার সব চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা লোপ পেয়ে যায়। এ কারণে লেখক সবাইকে স্বাবলম্বী হতে বলেছেন। অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকলে মানুষ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এতে স্বাধীনভাবে বাঁচার মানসিকতা হারিয়ে ফেলে। আমরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার চেষ্টা না করে অন্যের দাসত্ব স্বীকার করেছি বলে সেই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post